মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দমকলের পর এবার রাজ্যের সমবায় ব্যাংক নিয়োগেও লাগল দুর্নীতির ছায়া। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি (Teachers Recruitment scam) নিয়ে একের পর এক অভিযোগ সামনে এসেছে রাজ্যে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বা প্রাথমিক থেকে শিক্ষাকর্মী সর্বত্রই নিয়োগ দুর্নীতিতে জেরবার তৃণমূল সরকার। এবার ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। তমলুক – ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকে (Co Operative Bank) মন্ত্রী ও চেয়ারম্যান ঘনিষ্ঠদের বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার একটি জনস্বার্থ মামলায় অতিরিক্ত হলফনামা পেশ করেছেন মামলাকারীরা। সেই হলফনামায় নাম রয়েছে খোদ মন্ত্রী অরূপ রায়ের (Arup Roy)।
কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) জমা পড়া অতিরিক্ত হলফনামায় নিয়ম ভেঙে মন্ত্রী ঘনিষ্ঠদের চাকরি পাওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে এবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee), পরেশ অধিকারী, অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) সঙ্গে একই সারিতে পড়লেন মন্ত্রী অরূপ রায়ও। মন্ত্রী বা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ অনেককে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এদিন হলফনামা পেশ করা হয়েছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে মন্ত্রী জানিয়েছেন, এমন কোনও দুর্নীতিই হয়নি। এই অভিযোগ অসত্য ভিত্তিহীন। তিনি জানান, প্রকৃত তদন্ত হোক। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁরা শাস্তি পাবে।
হাইকোর্টে দাখিল হলফনামায় অভিযোগ, সমবায়মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সত্য সামন্তের বোন সমবায় ব্যাংকে চাকরি পেয়েছেন। ৫২টি শূন্যপদ থাকলেও নিয়োগ হয়েছে ১৩৪ জনের। একাধিক ব্যক্তির ঘনিষ্ঠদের চাকরি হয়েছে তমলুক-ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকে। এই ব্যাংকে তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে আদালতে।
আরও পড়ুন: পেগাসাস বিতর্কে স্বস্তি কেন্দ্রের! মাত্র ৫টি ফোনে ম্যালওয়ারের অস্তিত্ব মত শীর্ষ আদালতের
অতিরিক্ত হলফনামায় বলা হয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি প্রয়াত দেবব্রত দাসের ভাইপোও অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন। চাকরি পেয়েছেন সেই ব্যাংকের চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ্র মাইতির ভাইপো। এখানেই শেষ নয়। অতিরিক্ত হলফনামায় দাবি, কেন্দ্রীয় এই সমবায় ব্যাঙ্কের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সিইও প্রণয় কুমার চক্রবর্তীর ভাইপোও চাকরি পেয়েছেন। এছাড়াও ব্যাংক সচিব কৌশিক কুলভির ভাইপো, ব্যাংক কর্তা নিমাই অধিকারীর মেয়ে এবং ব্যাংকের কর্তা তপন কুমার কুলিয়ার ছেলেও চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, নিয়ম বহির্ভূত ভাবে নিয়োগের জন্য দুই দফায় অনুমতি দিয়েছিলেন মন্ত্রী অরূপ রায়। অভিযোগ, কো-অপারেটিভ, সার্ভিস কমিশন ছাড়া নিয়োগ করতে পারবে ব্যাংক, এই মর্মে দুবার অনুমোদন দিয়েছিলেন মন্ত্রী। মামলাকারীদের দাবি, কো-অপারেটিভ সার্ভিস কমিশন ছাড়া নিয়োগ করা আইনবিরুদ্ধ। মোট ২০৩৫ জন আবেদন করেছিলেন এবং ব্যাংকের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে ফি জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ফি জমা দেওয়ার এই তালিকায় ১০০ টির বেশি নাম ফাঁকা রয়েছে বলে অভিযোগ। আবেদন না করেও অনেকে চাকরি পেয়েছেন এমনই দাবি মামলাকারীদের। অভিযোগ, মেধাতালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও অনেকে চাকরি পেয়েছেন। ২০১৯ সালের বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে এই নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়। এই নিয়োগ নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় ২০২১ সালে। সেই মামলাতেই অতিরিক্ত হলফনামা দাখিল করে নতুন এই অভিযোগ জানানো হয়েছে।
+ There are no comments
Add yours