মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভেষজ উদ্যান জবরদখল হয়ে বদলে গিয়েছিল শুয়োরের খোঁয়াড়ে। এবার সেই জবরদখল ঠেকাতে পরিত্যক্ত জমিতে তপোবনের আদলে শহরের মধ্যে তৈরি হচ্ছে নগরবন। দূষণমুক্ত সবুজ অরণ্যের পাশাপাশি সেখানে থাকবে শিশুদের খেলার উদ্যান, বয়স্কদের জন্য পার্কিং, জগিং ট্র্যাকের ব্যবস্থা। দুর্গাপুর শহরের সিটি সেন্টার (Durgapur City Centre) ও বিধাননগরের মতো দুই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জোরকদমে চলছে নগরবন তৈরির কাজ।
এ রাজ্যে কেন্দ্রের প্রকল্পটি কী?
প্রসঙ্গত, গত বছর ৮ জুলাই কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় এরাজ্যের দুর্গাপুর ও বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে তৈরি হয়েছে নগরবন। দুর্গাপুর, বিষ্ণুপুর সহ সারা দেশের ৭৫ টি জায়গায় একসঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই নগরবনের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুর্গাপুরের ১ নং ওয়ার্ডের পারুলিয়ায় প্রস্তাবিত ২৫ হেক্টর জমিতে নগরবনের কাজের উদ্বোধন হয়। দিল্লি থেকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পাশাপাশি এখানে উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়া, বীরভুম, দুই বর্ধমান সার্কেলের বন আধিকারিক কল্যাণ দাস। এছাড়াও ছিলেন সচিব সোমা দাস। দুর্গাপুরের পারুলিয়ায় ২৫ হেক্টর জমি ছাড়াও এই রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে ১০ হেক্টর জমিতে তৈরি হচ্ছে নগরবন।
রাজ্য কোথায় তৈরি করছে নগরবন?
দুর্গাপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টার (Durgapur City Centre) ও বিধাননগর এলাকায় আরও দুটি নগরবন তৈরি করছে বন দফতর। জাতীয় সড়ক লাগোয়া নির্ধারিত জমি দুটি আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ)। ব্যবহার না হওয়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। সিটি সেন্টার ডিভিসি মোড়ের কাছে সড়কের একদিকে তৈরি হচ্ছে জেলা প্রশাসনিক কার্যালয়। রয়েছে রাজ্য সরকারের অতিথি নিবাস। এছাড়াও রয়েছে এনার্জি পার্ক, ভগৎ সিং ক্রীড়াঙ্গন। স্বাভাবিকভাবেই জায়গাটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বামফ্রন্ট জমানায় ওই জমিতে ভেষজ উদ্যান তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু, ভেষজ উদ্যান অচিরেই জবরদখলের কব্জায় চলে যায়। বিশাল ওই জমির একপ্রান্তে কাজুবাদাম গাছের বাগান ছিল, আবার অপরদিকে গজিয়ে ওঠে শুয়োর চাষের খোঁয়াড়। আর শহরের প্রাণকেন্দ্রে শুয়োর চাষ ও নোংরা-আবর্জনায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হওয়ায় বারবার প্রশ্নের মুখে দুর্গাপুর নগর প্রশাসন। এমনকী তার উল্টোদিকে অতিথি নিবাসে মুখ্যমন্ত্রী রাত্রিযাপন করায় বিষয়টি নজরে পড়ে। শহরের মাঝে জমা নোংরা জঞ্জালে এককথায় নরক তৈরি হয়েছিল। একইরকম ভাবে বিধাননগরের ওই পরিত্যক্ত জমিতে জবরদখল ক্রমবর্ধমান ছিল। আর এই জবরদখল মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে এডিডিএ'র। জবরদখলের ফলে শহরের সৌন্দর্যায়ন, সবুজায়ন সব মুখ থুবড়ে পড়ে।
কী থাকছে এই নগরবনে?
রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের মদত থাকায় জবরদখল উচ্ছেদে বাধাও পেতে হয় এডিডিএ-কে। তবে সম্প্রতি জবরদখল রুখতে কঠোর হয় এডিডিএ। গত কয়েকমাস ধরে শহরের সরকারি জমির ওপর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে তারা। এদিকে শহরকে সৌন্দর্যায়ন করতে ও দূষণমুক্ত পরিবেশের লক্ষ্যে সবুজায়নের উদ্যোগ নেয় দুর্গাপুর আঞ্চলিক বনবিভাগ। সেই মতো এডিডিএ র কাছে ২৫ হেক্টর জমির আবেদন করে দুর্গাপুর আঞ্চলিক বনবিভাগ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সিটি সেন্টার (Durgapur City Centre) ও বিধাননগরে দুটি জমি পাওয়া যায়। ওই দুই জায়গা নগরবন তৈরির জন্য দুর্গাপুর আঞ্চলিক বনবিভাগের হাতে তুলে দেয় এডিডিএ । গত দুমাস ধরে ওই দুটি জায়গায় নোংরা জঞ্জাল ও আগাছা সাফাই করা হয়। তারের জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় গোটা এলাকা। ওই জমির ওপর বড় গাছগুলিকে অক্ষত রেখে খোলনলচে বদলে ফেলার কাজ শুরু হয়। মাটি কেটে জলাশয় তৈরি করা হয়েছে। জলাশয়ের পাড়ে বসানো হচ্ছে সবুজ ঘাস। এছাড়াও আমলকি, বহড়া, হরিতকি, অশোক সহ নানান ভেষজ ঔষধি চারাগাছ লাগানোর কাজ চলছে। এছাড়াও ইট ও বাঁশের বেত দিয়ে সৌন্দর্যয়ানের কাজ। স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটার জন্য রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। বন দফতর সুত্রে জানা গেছে, অনেকটা পৌরানিক যুগের তপোবনের আদলে তৈরি হবে নগরবন। থাকবে প্রজাপতি, পাখিদের আবাসস্থল। প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে নগরবন। বয়স্কদের জন্য যেমন জগিং ট্র্যাক থাকবে, তেমনই ছোটদের জন্য বিনোদনের পার্ক থাকবে। এছাড়াও তৈরি হবে শ্রুতিবন। যেখানে মৃত পূর্বপুরুষদের নামে একটি করে চারাগাছ লাগাতে পারবেন ইচ্ছুকরা। এছাড়াও থাকবে নক্ষত্রবন। রাশিফল ও গ্রহ নক্ষত্রের দোষ কাটাতে যেসমস্ত গাছ ব্যাবহার করা হয়, ওইসব গাছ লাগানো হবে।
সরকারি আধিকারিকরা কী জানালেন?
আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, "রাজনৈতিক মদতপুষ্ট লুটেরাদের হাত থেকে সরকারি জমি বাঁচাতে এবং শহরকে সৌন্দর্যায়ন ও সবুজায়ন করতে এই উদ্যোগ। এখনও পর্যন্ত এরকম পরিত্যক্ত ৪টি প্লট পাওয়া গেছে। সেগুলি বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সবুজায়নের জন্য।" দুর্গাপুর আঞ্চলিক বনাধিকারিক বুদ্ধদেব মন্ডল জানান, "শহরের অব্যবহৃত জমির জন্য এডিডিএ ও ডিএসপি র কাছে আবেদন করা হয়েছিল। প্রায় ২৫ হেক্টর জমি পাওয়া গেছে। তার ওপরই (Durgapur City Centre) শহর কেন্দ্রিক এই নগরবন তৈরির কাজ হচ্ছে। মূলত দূষণ রোধের পাশাপাশি মানুষকে প্রাণ ভরে অক্সিজেনের জোগান দেওয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। এই নগরবনে দেশীয় গাছ লাগানো হবে। ফলের বাগান তৈরি হবে। যোগব্যায়ম, শিশুদের খেলাধূলার ব্যাবস্থা থাকবে। সুন্দর প্রাকৃতিক মনরোম পরিবেশ গড়ে তোলা হবে।"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours