তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
সরকারি হাসপাতালে রোগীর অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা অনেকটাই কম। দীর্ঘদিনের অভিযোগ, চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। এমনকি জরুরি অস্ত্রোপচারের দিন পেতেও মাসের পর মাস কেটে যায়। এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মতো প্রথম সারির সরকারি হাসপাতাল হোক কিংবা পিছিয়ে পড়া কোনও জেলার হাসপাতাল, রোগী-ভোগান্তির চিত্র সর্বত্র এক। সেই ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে, চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্য প্রশাসনের সক্রিয়তার অভাবের জেরেই স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আগামী দিনে আরও ভোগান্তি বাড়বে (West Bengal Health)।
কেন বাড়তি ভোগান্তির আশঙ্কা? (West Bengal Health)
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সম্প্রতি স্নাতকোত্তর পর্বের বিশেষজ্ঞ কোর্সে প্রায় সমস্ত আসন খালি। অধিকাংশ বিভাগেই পড়ুয়া নেই। বিশেষত কার্ডিওভাসকুলার সার্জারি, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, নিউরো সার্জারি এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ারের মতো বিভাগে একেবারেই পড়ুয়া নেই।
শিক্ষক-চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শল্য চিকিৎসায় স্নাতকোত্তর পাশ করার পরে কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি, কার্ডিওভাসকুলার সার্জারি, পেডিয়াট্রিক সার্জারির মতো বিষয়গুলিতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য পড়াশোনা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, সর্বশেষ কাউন্সেলিংয়ে এই বিভাগগুলিতে দশজন করেও পড়ুয়া পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ বিভাগ একেবারেই শূন্য। অর্থাৎ, চিকিৎসকেরা এই সমস্ত বিভাগে বিশেষজ্ঞ হওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলছেন। এর ফলে সরাসরি প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্য পরিষেবায়। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে (West Bengal Health)।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্যের অধিকাংশ হাসপাতালেই হৃদরোগের অস্ত্রোপচার কিংবা স্নায়ুর জটিল অস্ত্রোপচার করতে অপেক্ষা করতে হয়। রোগী দীর্ঘ অপেক্ষার পরে পরিষেবা পান। তার কারণ, চিকিৎসকের অভাব। তার উপরে এই প্রবণতা চলতে থাকলে সেই অপেক্ষার সময় আরও দীর্ঘ হবে। সবচেয়ে করুণ পরিস্থিতি শিশু বিভাগে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল শিশু শল্য বিভাগ ও চিকিৎসকের অভাবে ভুগছে। এ বছরেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পর্যাপ্ত পাওয়া গেল না। ফলে, এর জেরে ভোগান্তি আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
কেন অনীহা ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসায়? (West Bengal Health)
প্রবীণ চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্যের পরিস্থিতির জন্য চিকিৎসক পড়ুয়াদের মধ্যে এই অনীহা তৈরি হয়েছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত দশ বছরে রাজ্যে একাধিক চিকিৎসক হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে। শারীরিক নিগ্রহের শিকার হওয়ার পরে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রশাসনকে পাশে পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপের নির্দশন খুবই কম। যার ফলে, চিকিৎসক পড়ুয়াদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার ইচ্ছে কমেছে। পেডিয়াট্রিক সার্জারি হোক কিংবা জরুরি চিকিৎসা, এই ধরনের বিভাগে কাজ করার ক্ষেত্রে নানান জটিলতা তৈরি হয়। রোগীর প্রাণ বাঁচাতে কখনোই ১০০ শতাংশ সাফল্য পাওয়া যায় না। কিন্তু সব সময় রোগী মৃত্যুর দায় চিকিৎসকের নয়। চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগী মারা যান, এমনটাও নয়। এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা করতে হলে চিকিৎসকের সুরক্ষা নিশ্চিত থাকা জরুরি। পরিস্থিতি অন্যরকম হলে যদি চিকিৎসকদের নিগ্রহের শিকার হতে হয়, তাহলে এই ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসার প্রতি তরুণ চিকিৎসকদের আরও বেশি অনীহা তৈরি হবে বলেই মনে করছেন রাজ্যের চিকিৎসক মহল। অধিকাংশ চিকিৎসক সংগঠন জানাচ্ছে, এ রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা করার মতো পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। আর সে দায়িত্ব প্রশাসনের। সেই কাজ রাজ্য প্রশাসন ঠিকমতো করতে না পারলে আগামী দিনে এ রাজ্যে জটিল চিকিৎসা আর হবে না (West Bengal Health) বলেই আশঙ্কা করছেন রাজ্যের অধিকাংশ প্রবীণ চিকিৎসক।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours