তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
রোগী-চিকিৎসকের অনুপাতে বিস্তর ফারাক। চিকিৎসা পরিষেবা পেতে অনেকেই ভিড় করেন সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু রোগী পিছু এক মিনিটও বরাদ্দ করতে পারেন না সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। আর তাই রোগীদের ভোগান্তিরও অন্ত নেই। চিকিৎসকের এই ঘাটতি পূরণেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিন বছরের প্রশিক্ষণ দিয়ে হেলথ প্রফেশনাল তৈরির কথা জানিয়েছেন, যা লোকমুখে সিভিক ডাক্তার বলে বহুল পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবন (West Bengal Health) সূত্রে জানা যাচ্ছে, তিন বছর ধরে এমবিবিএস পাশ করা চিকিৎসকদের নিয়োগ করছে না রাজ্য সরকার। হাজার ছয়েক চিকিৎসক চাকরি পাচ্ছেন না।
কী বলছে স্বাস্থ্য ভবনের তথ্য?
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সাল থেকে মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে রাজ্য সরকার। এমবিবিএস পাশ করার পর গ্রাম কিংবা শহরের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসাবে নিয়োগ করা হয়। তাঁদের বলা হয় মেডিক্যাল অফিসার। ২০২১ সাল থেকে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ। প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার চিকিৎসা পড়ুয়া এমবিবিএস পাশ করেন। অর্থাৎ, তিন বছরে প্রায় ছ'হাজার এমবিবিএস পাশ করা চিকিৎসক রাজ্য স্বাস্থ্য পরিষেবার (West Bengal Health) সঙ্গে যুক্ত হতে পারতেন। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
কেন বন্ধ নিয়োগ প্রক্রিয়া?
স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোনও উত্তর দেননি। তিনি জানান, বিষয়টি বিভাগের অভ্যন্তরীণ। এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলবেন না। তবে স্বাস্থ্য দফতরের (West Bengal Health) অন্দরের খবর, একজন পাশ করা চিকিৎসককে নিয়োগ করতে হলে তাঁর বেতন যা দিতে হবে, তার তুলনায় অনেক কম বেতনে হেলথ প্রফেশনালদের দিয়ে কাজ করানো যাবে। তবে অবশ্যই পরিষেবার মান এক থাকবে না। কিন্তু সরকার এখন পরিষেবার মানের চেয়ে অন্য দিক বেশি বিবেচনা করছে। আর তাই নিয়োগও আপাতত বন্ধ।
কী বলছে চিকিৎসক মহল?
চিকিৎসক মহলের (West Bengal Health) একাংশ জানাচ্ছে, রাজ্যে বাড়ছে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা। বাড়ছে আসন। পড়ুয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। ২০২১ সালে যেখানে গোটা রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ছিল ২৩ এবং আসন ছিল ২৫৫০, সেখানে ২০২৩ সালে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২, আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছে, ৪,৮২৫। তাহলে প্রতি বছর চার হাজার পড়ুয়া এমবিবিএস পাশ করবে। এত চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও কেন চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে না? চিকিৎসক মহলের প্রশ্ন, অন্য কোনও রাজনৈতিক সমীকরণের জন্য কি এই সিদ্ধান্ত?
পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রেও আগে দেখা গিয়েছিল, পূর্ণ সময়ের প্রশিক্ষিত পুলিশ নিয়োগের পরিবর্তে, সিভিক পুলিশ নিয়োগেই বেশি আগ্রহী রাজ্য সরকার। অনেক জায়গায় অভিযোগ ওঠে, সিভিক পুলিশ আসলে রাজ্যের শাসক দলের কর্মী। তার উপর সিভিক পুলিশ অধিকাংশ সময়ই শাসক দলের হয়ে কাজ করে। ঠিক সেই ধাঁচেই এবার 'সিভিক' চিকিৎসক গড়ার সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের। বিরোধীরা জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য দফতরের নানা দুর্নীতি ঢাকতেই কি পাশ করা যোগ্য চিকিৎসকদের নিয়োগ করতে চাইছে না রাজ্য?
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours