তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সিজার করে সন্তান প্রসবের (Caesarean Delivery) প্রবণতা বাড়ছে রাজ্যে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রসূতিকে জানানো হচ্ছে, সিজার ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় সিজারের মাধ্যমে প্রসব করানো হচ্ছে। এ নিয়ে একাধিক সময়ে রোগীর পরিজন অভিযোগ জানিয়েছেন। কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে তাই রাজ্যের কাছে সিজার অডিট পাঠানোর জন্য জানানো হয়েছে। কিন্তু সে নিয়েও চলছে নানা টালবাহানা!
সমস্যা কোথায়?
এ রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি, সব হাসপাতালের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে অপ্রয়োজনীয় সিজার (Caesarean Delivery) করানোর। প্রসূতি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও অনেক সময় সিজার করা হয়। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে তাই জানানো হয়েছে, রাজ্যকে সিজার অডিট পাঠাতে হবে। মন্ত্রক যাচাই করে দেখবে, সিজারের প্রয়োজন কতখানি হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে সিজার করা হচ্ছে। কিন্তু নিয়ম মাফিক সিজার অডিট মন্ত্রকের কাছে পৌঁছচ্ছে না বলে অভিযোগ।
সিজার অডিট কী? কেন একে গুরুত্ব দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যে কোনও প্রসূতিকে সিজার করানোর পর চিকিৎসক স্পষ্ট লিখিত ব্যাখ্যা দেবেন, কেন তার সিজার (Caesarean Delivery) করা হল। সেই ব্যাখ্যা জমা করতে হবে স্বাস্থ্য ভবনে। শুধু সরকারি ক্ষেত্রে নয়, বেসরকারি হাসপাতালেও এই নিয়ম মানতে হবে। তারপরে রাজ্যে কতগুলো সিজার হচ্ছে, কেন হচ্ছে, সেই হিসাব স্পষ্ট হবে। আর সেই হিসাবকেই বলা হচ্ছে সিজার অডিট। যা রাজ্য থেকে চাইছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। অপ্রয়োজনীয় সিজার (Caesarean Delivery) মহিলাদের জীবনে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাধারণ প্রাকৃতিক নিয়মে প্রসব করতে হলে একজন প্রসূতির ২৫০ মিলিলিটার রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের সময় মায়ের ১০০০ মিলিলিটার রক্তক্ষরণ হয়। এই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শরীরে একাধিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। এ দেশে মহিলাদের রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার প্রবণতা প্রবল। তার উপরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শরীরকে দূর্বল করে দেয়। যা সদ্যোজাত ও মা দুজনের জন্য ভালো নয়। তাছাড়া, সিজার করার জন্য মায়ের স্নায়ুতন্ত্রকে সাময়িক অজ্ঞান করা হয়। পরবর্তীতে তার জন্য মহিলাদের কোমরে নানা সমস্যা হয়।
কী বলছেন চিকিৎসকরা?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কাদের সিজার (Caesarean Delivery) করতে হবে, তা নিয়ে সরকারের স্পষ্ট নির্দেশ আছে। মন্ত্রকের তরফেও স্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে, কখন প্রসূতির সিজারের প্রয়োজন হবে। বিশেষত যাঁরা দেরিতে মা হচ্ছেন, কোনওরকম শারীরিক জটিলতা রয়েছে, কিংবা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়বেটিস রয়েছে, এমন প্রসূতির সিজার প্রয়োজন। আবার গর্ভস্থ শিশুর কোনও শারীরিক জটিলতা থাকলেও সিজার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। দ্রুত প্রসব করানোর জন্য প্রথমেই সিজারের পথ বেছে নেওয়া হচ্ছে।
কী বলছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা?
স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, রাজ্যের সমস্ত হাসপাতাল থেকে নথি আসতে সময় লাগবে। সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালের সিজার (Caesarean Delivery) অডিট হাতে পাওয়া দরকার। সময়মতো সবটাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, রাজ্য থেকে কেন্দ্রের কাছে কোনও রিপোর্ট কিংবা তথ্য পাঠানো নিয়ে টালবাহানা থাকছেই। সেটা ডেঙ্গির তথ্য হোক কিংবা সিজার অডিট! সবকিছুতেই থাকছে রাজনীতির জটিল হিসাব। আর তার জেরেই ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ মানুষ!
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours