মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: যোগ হল এমন একটি আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলা যা শরীর ও মনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে।যোগ শব্দটি সংস্কৃত মূল 'যুজ' থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ 'যোগ দেওয়া' বা'একত্রিত হওয়া'। আধুনিক বিজ্ঞানীদের মতে, মহাবিশ্বের সবকিছুই একই কোয়ান্টাম ফার্মামেন্টের একটি প্রকাশ মাত্র। যিনি এই অস্তিত্বের একত্ব অনুভব করেন তাকেই যোগী বলা হয়। যোগের ইতিহাস খুঁজতে গেলে দেখা যায় বৈদিক যুগের পূর্বেই এই যোগের উৎপত্তি। আবার অনেকে বলেছেন মহর্ষি পতঞ্জলি যোগাসনার উদ্ভব করেছেন। এই নিয়ে তর্কবিতর্ক রয়েছে।
সিন্ধু সভ্যতার বেশ কিছু শিলমোহরে যোগাসনরত চিত্র খোদাই করা রয়েছে। প্রাচীন এই যোগাভ্যাস ভারতে বাইরে প্রসিদ্ধ থাকলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে ভারতের এই প্রাচীন এই শরীরচর্চাবিদ্যা রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে সারা পৃথিবীতে বিশ্ব যোগ দিবস ( World Yoga Day) হিসেবে পালন করা হচ্ছে। ২০১৫ সালের ২১ জুন থেকে রাষ্ট্রসংঘের সঙ্গে যুক্ত ৪৪ টি মুসলিম দেশ সহ মোট ১৯২ টি দেশ বিশ্ব যোগ দিবস পালন করেছিল।
নিয়মিত যোগাভ্যাসে শরীর নিরোগ থাকে।
বর্তমানে কর্মব্যস্ততার জীবনে নানা ধরনের চিন্তা, কাজের চাপে আজকাল অনেক কম বয়েসেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। যোগাব্যায়ামের পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।ধূমপান করার অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করতে হবে।
দেখে নিন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কী কী যোগাভ্যাস করা প্রয়োজন।
সূর্য নমস্কার
সূর্য নমস্কার দিয়ে শুরু করুন। ভোর বেলায় খালিপেটে সূর্য নমস্কার করা সবচেয়ে ভাল। প্রথমে হাত জোড় করে নমস্কার করার ভঙ্গিতে দাঁড়ান। হাতের তালুতে তালুতে খুব জোরে চাপুন যাতে বুকের পেশি শক্ত হয়। তার পর এই চাপ বজায় রেখে অর্ধচন্দ্রাসনের ভঙ্গিতে হাত তুলে পেছনে বেঁকান। ওখান থেকে সামনে ঝুঁকে হাত পায়ের সামনে মাটিতে রেখে পদহস্তাসন করুন। এই অবস্থায় হাঁটু ভেঙে বসে পড়ুন। ওই অবস্থায় ডান পা পেছনে সোজা করে দিন।এ বার হাঁটু থেকে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকান। বাঁ পা পেছনে সোজা করে দিন। এ বার ডনের ভঙ্গিতে হাতের জোরে নামুন। ডন থেকে আস্তে আস্তে উঠুন। বাঁ পা পূর্বের ভঙ্গিমায় ভাঁজ করে সামনে নিয়ে আসুন। মাথা নামান। ডান পা ভাঁজ করে সামনে নিয়ে আসুন। নিতম্ব গোড়ালিতে লাগিয়ে বসুন। আবার নিতম্ব তুলে সোজা রেখে পদহস্তাসন করুন। এ বার হাত তুলে অর্ধচন্দ্রাসনের ভঙ্গিতে পেছনে বেঁকান। সেখান থেকে সোজা হয়ে হাত জোড় করে নমস্কার করার ভঙ্গিতে ফিরে আসুন।
শিশু আসন
হামাগুড়ি দেওয়ার ভঙ্গিতে মেঝেতে বসুন। এবার আস্তে আস্তে সারা শরীর পিছনে নিয়ে গিয়ে শরীরের পশ্চাদ্দেশ পায়ের গোড়ালির উপর রাখুন। কপাল মাটিতে ঠেকান। হাত দু’টো পিছনে নিয়ে গিয়ে তালু উল্টো করে পায়ের কাছে রাখুন। মানসিক চাপ ও ক্লান্তি কমাতে সহায়তা করে এই যোগাসন। দেহে রক্তসঞ্চালনের প্রক্রিয়াকেও স্বাভাবিক রাখে।
বজ্রাসন
সোজা হয়ে বসুন। সামনের দিকে প্রথমে পা ছড়িয়ে দিন। এবার একটা করে পায়ে হাঁটু মুড়ে তার উপর বসুন। গোড়ালি জোড়া রাখবেন এবং শিরদাঁড়া সোজা রাখবেনে। হাত দু’টো উরুর উপর সোজা করে রাখুন। দুপুর বা রাতের খাওয়ার পরেও এই যোগাসন করতে পারেন। এটি শরীরে অতিরিক্ত মেদের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এবং পেটের তলদেশে রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক করে।
পশ্চিমোত্তানাসন
প্রথমে পা ছড়িয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন। ভাল করে শ্বাস নিন। এরপর মাথার উপরে হাত দু’টো সোজা করে নমস্কারের ভঙ্গিতে প্রসারিত করুন। এবার শ্বাস ছাড়ুন। শরীর বেঁকিয়ে হাত দু’টো পা অবধি নিয়ে যান, পা যেন না বেঁকে। এই অবস্থায় হাত দু’টো দিয়ে গোড়ালি জড়িয়ে ধরুন। এবার পায়ের উপর মাথা রাখুন। কিছুক্ষণ রাখার পর হাত দু’টো আবার মাথা পর্যন্ত প্রসারিত করুন। দিয়ে প্রথমে যে ভাবে বসেছিলেন সেই ভঙ্গিতে ফিরে যান। ওজন কমানোর পাশাপাশি পেটের তলদেশের মেদও ঝরায় এই ব্যায়াম। মানসিক চাপ কমানোর পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপকেও কমায়।
সুখাসন
এই যোগ ব্যায়ামের ফলে শরীর ও মনে এক ধরনের সার্বিক ভারসাম্য আসে। মন ও মেজাজ ভাল থাকে। শিরদাঁড়া সোজা রেখে বাবু হয়ে বসুন। ধ্যানের ভঙ্গির এই আসন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
+ There are no comments
Add yours